ভূমিকা
মা আর মাটির সাথে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বনে-বাদাড়ে কিংবা গুহায় বাস করা মানুষটি যখন খাদ্যের জন্য বৃক্ষের উপর নির্ভরশীল হয়ে ‍উঠল তখন থেকেই মাটির গুরুত্ব হয়ে উঠল বনবাসী মানুষদের কাছে অপরিসীম।  আদি হতে এখন পর্যন্ত সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে পরিবর্তনশীল  অথচ শক্তিশালী  কার্যকর নিয়ামক হচ্ছে ভূমি। ভূমিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সকল সমাজ ব্যবস্থা । আবার ভূমির জন্যই যুগে যুগে সৃষ্টি হয়েছে যুদ্ধবিগ্রহ। ভূমির কারণেই ধ্বংস হয়েছে রাষ্ট্রের আবার গড়েও উঠেছে নতুন রাষ্ট্রের। তাই ভূমিকে বাদ দিয়ে কোন রাষ্ট্র, সমাজ কিংবা সভ্যতা কিছুই কল্পনা করা যায়না। 
বাঙালীর ইতিহাস যেহেতু সুপ্রাচীন আর তাই এদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত প্রাচীন। সামন্ত প্রথা হতে শুরু করে  জমিদারি প্রথা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিপীড়ন, নীলচাষ, কৃষক কিংবা সাওতাল বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন এ শব্দগুলির সাথে বাঙালীর পরিচয় আবহমানকাল হতেই। ব্রিটিশ শাসনামল হতে জমি-জমা সম্পর্কিত বাঙালীর আবেগ-অনুভূতি ঐতিহাসিকভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালুর মাধ্যমে যে জমিদারী প্রথার সৃষ্টি তা আবার বিলুপ্ত হয় ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের মধ্য দিয়ে। আর সেটাই ছিল সাধারণ মানুষের প্রজা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে জমির উপর স্বত্বপ্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। পরবর্তীতে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ প্রণয়ণের মাধ্যমে এদেশে জমিদারী প্রথা সম্পূর্ণরুপে বিলুপ্তির পাশাপাশি প্রজাগণ জমির মালিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। আর সরকার বা রাষ্ট্র হয়ে যায় জমির পরোক্ষ মালিক। আর তাই ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে সরকারী অফিসগুলোতে মানুষের যাতায়াত এখনও কমে যায়নি। আধূনিক ও জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা বিগত শতবর্ষেও গড়ে না ওঠার ব্যর্থতা আমাদেরেই। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ন আর মানুষের হয়রানীর জায়গাটি আজও রয়েছে বিদ্যমান । তবে আশার কথা হচ্ছে, সরকারের সদিচ্ছা এবং তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সাম্প্রতিক কালে ভূমিতেও লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। আধূনিক, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকার আজ বদ্ধ পরিকর।
আইনের দুর্বোধ্যতা আর ভূমি নিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের অসচেতনতার সুযোগে গড়ে ওঠেছে একপ্রকার মধ্যস্বত্বভোগী আর এরই সাথে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত কিছু অসাধূ কর্মচারীর যোগসাজসকে অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।  জনভোগান্তির বিষয়গুলো দেখলে পাওয়া যাবে, নামজারি মামলা অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রিতা, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারন ও আদায়, বছরের পর বছর চলমান বিবিধ (রিভিউ) মামলা, ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত, অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা, নথি খুঁজে না পাওয়া ইত্যাদি। আর এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সেবা প্রদানকে আরোও বেশি জনবান্ধব করার জন্য এ সার্কেল যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করি। নামজারীর ক্ষেত্রে ফরোয়ার্ড ডায়েরী ও নামজারী ক্যালেন্ডার তৈরী, মিস (রিভিউ) মামলার আবেদনপত্র প্রস্তুতের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে নিস্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমিহীন-গৃহহীনদের তালিকা প্রণয়ন, ল্যান্ড ট্যাক্স ক্যালকুলেটর প্রণয়ন,  সার্টিফিকেট মামলার ডাটাবেজ তৈরী, অর্পিত সম্পত্তি এবং জলমহাল ও হাট-বাজারের ডাটাবেজ তৈরী, রেকর্ডরুম সজ্জিতকরণ ও ডাটাবেজ তৈরী ইত্যাদি কাজগুলো ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। জনগণের সেবাকে আরও ঝামেলাহীন করতে নির্মাণ করা হয়েছে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র। আর এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহোদয় অকুন্ঠ সমর্থন না পেলে কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হতোনা।  বিগত সাত মাস যাবৎ এসকল বিষয়ে কাজ করে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবাদানের একটি স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী প্রক্রিয়া তৈরীর চেষ্টা করেছি। জানি হয়তো এখনও অনেক কাজ বাকি। তবুও জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ার লক্ষ্যে সকল সেবা, সেবার পাবার ধাপ ও ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যকে সন্নিবেশ করে জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য পৌছে দেবার একটি প্রয়াসই হচ্ছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) , সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল, নারায়ণগঞ্জ এর ওয়েবসাইট নির্মাণ। আশা করা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) , সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল, নারায়ণগঞ্জ -এর সকল কার্যক্রমের সাথে আপনাদের সম্পৃক্ততা কামনা করছি। আপনার যেকোন পরামর্শ/মতামত ডিজিটাল সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল গড়তে আমাদেরকে সহায়তা করবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
 
শারাওয়াত মেহজাবীন
সহকারী কমিশনার (ভূমি),সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল, নারায়ণগঞ্জ
০১৯৯৪৯৫৫৩১২
 
 
 

সহকারী কমিশনার (ভূমি)


নোটিস বোর্ড